আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বর্তমানে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করার পরিকল্পনা করছেন। তবে ইউটিউব চ্যানেলের করার জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটি হল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব সংখ্যা।
যখনি নতুন কোন ইউটিউব চ্যানেল খোলা হয় তখন দেখা যায় যে আমাদের চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে প্রায় অনেক মাস কিংবা বছর লেগে যেতে পারে।
আপনি যখনই নতুন একটি ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করবেন, তখন ওই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১০০০ করতে হলে একদম মাথাচাড়া দিয়ে কাজ করতে হবে।
আজকের এই পোস্টটিতে আলোচনা করব কিভাবে আপনি খুব সহজেই আপনার ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন।
মূলত আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইব বৃদ্ধি করার জন্য যে সমস্ত বিষয় গুলো আপনার চ্যানেলের মধ্যে অবশ্যই যুক্ত করতে হবে, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
পোস্টের ভিতরে যা থাকছে
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব কি?
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব হলো, এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে যে কেউ আপনার চ্যানেলের ভিডিও পছন্দ করলে এটি তাদের বুকমার্কের সেভ করে রেখে দিল।
বিষয়টা এরকম যে আপনার চ্যানেলে যে সমস্ত মেম্বাররা সাবস্ক্রাইব করবে তারা আপনার চ্যানেলে আপলোড করার সমস্ত ভিডিও এর নোটিফিকেশন সবার আগে তাদের ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পারবে।
এতে করে তারা আপনার ভিডিওর টাইটেল এর উপর ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলে চলে আসবে এবং আপনার ভিডিওটি তারা দেখার মাধ্যমে আপনার চ্যানেলের ভিডিও ভিউ সংখ্যা বৃদ্ধি করবে।
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব বৃদ্ধি করতে হলে যা করবেন
- ইউনিক কনটেন্ট
- সময় উপযোগী কনটেন্ট
- কনটেন্টের কোয়ালিটি মান উন্নয়ন
- কিছু ইনফোগ্রাফিক্স এবং এনিমেশন এড করা
- একটি ইন্টারেস্টিং টাইটেল
- ভিজিটরের প্রশ্নের উত্তর
- কমেন্টে রেসপন্স করা ইত্যাদি!
ইউনিক কনটেন্ট
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা ইউটিউবে নতুন চ্যানেল তৈরি করার পরে যখন কোন একটি ভিডিও কনটেন্ট আপলোড দেন, তখন কপিরাইটের সহযোগিতা নিতে বাধ্য হন।
এই সমস্ত নতুন ইউটিউবাররা সাধারণত তাদের ভিডিও কোয়ালিটির দিকে নজর না দিয়ে এটা ডিউরেশন কিংবা ইন্টারেস্টিং করার জন্য কপিরাইট আইডিয়া যোগ করেন।
যা যেকোনো ধরনের ভিজিটর এর জন্য ওভার ওয়ার্মিং হয়ে যায়।
কারণ যে কেউই কপিরাইট কনটেন্ট দেখতে মোটেও পছন্দ করেন না। আর আপনি যদি আপনার ভিডিও এর মধ্যে কপিরাইট কোন কিছু যুক্ত করে নেন যা আগে কিংবা পূর্ববর্তী কেউ দেখে নিয়েছে তাহলে সে কখনোই আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করবে না।
এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আপনার নিজের থেকে একটি কনটেন্ট ক্রিয়েট করতে হবে, এবং তারপর এটি জনসম্মুখে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই আপনার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা অনেকটা বেড়ে যায়।
সময় উপযোগী ভিডিও তৈরি করা
আপনি এরকম অনেক ভিডিও ক্রিয়েটর দেখবেন যারা সাধারণত অফটপিক কোন একটি বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের ইউটিউব চ্যানেলে আলোচনা করে।এটা মোটেও যে কেউ পছন্দ করার মতো বিষয় নয়।
কারণ আপনি যখন একটি অফটপিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তখন এই ভিডিওটি কেউই দেখতে চাইবে না।
আর যখন আপনার ভিডিও টাইটেল এর উপর ক্লিক করবে না এবং এই ভিডিওটি দেখার ইচ্ছা পোষণ করবে না, তখন আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা কিভাবে বৃদ্ধি পাবে?
এজন্য আপনাকে ভিডিও তৈরি করার আগে অবশ্যই সময় উপযোগী একটি কনটেন্ট তৈরি করতে হবে।
যাতে করে যে কেউ এই রিলেটেড কোন প্রশ্ন কিংবা জিজ্ঞাসা থাকলে আপনার চ্যানেলে আপলোড করা ভিডিও এর মাধ্যমে তার সমাধান নিয়ে নিতে পারে।
আপনি যখন ভিডিও তৈরি করবেন তখন অবশ্যই যেকোনো ধরনের একটি ট্রেন্ডিং টপিক নিয়ে আলোচনা করবেন যাতে করে আপনার চ্যানেলের ভিউ এবং সাবস্ক্রাইব সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
কনটেন্টের কোয়ালিটি এবং মান উন্নয়ন
আপনি যখন একটি ভিডিও তৈরি করবেন তখন অবশ্যই আপনার ভিডিওয়ের কোয়ালিটির উপর নজর আরোপ করবেন এবং এই ভিডিও এর মান কিভাবে উন্নয়ন করা যায় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন।
ভিডিও এর মান উন্নয়ন বলতে আপনাকে অবশ্যই রিলেটেড টপিক এর মধ্যে যে সমস্ত গুলো তৈরি করা হয়েছে এবং ভিডিও তৈরি করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত ঘাটতি রয়েছে, সেগুলোর সমাধান করে ভিডিও তৈরি করতে হবে।
এছাড়াও ভিডিও এর কোয়ালিটির দিকে নজর দেয়া বলতে আপনাকে অবশ্যই ফুল এইচডি কোয়ালিটি তে ভিডিও তৈরি করতে হবে, যাতে করে এতে যে কেউ স্পষ্টভাবে দেখতে পারে।
আর ভিডিও মানোন্নয়ন এবং এর কোয়ালিটি মেইনটেইন যখন আপনি করতে পারবেন তখনই আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবে।
ইনফোগ্রাফিক্স এবং এনিমেশন
ভিডিও তৈরি করার আগে আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের ফ্রি কিংবা পেইড টুলস এর সহযোগিতা নিয়ে কিছু ইনফোগ্রাফিক্স আপনার ভিডিওতে যুক্ত করে নিতে পারেন।
কারণ, আপনার ভিডিওতে যখন ইনফোগ্রাফিক্স যুক্ত করবেন তখন এটি আপনার ভিডিও এর কোয়ালিটি এবং মান অনেকটা বৃদ্ধি করে দিবে, এবং যেকোন ধরনের ভিজিটরকে আপনার ভিডিও সম্পর্কে ভালো ধারণা দিবে।
এছাড়াও আপনি যদি অ্যানিমেশন দিয়ে আপনার ভিডিও তৈরি করতে পারেন তাহলে এটা আরও উত্তম হয় কারণ অ্যানিমেশন গুলো আপনার ভিডিওর কোয়ালিটি বাড়িয়ে দেয়।
একটি ইন্টারেস্টিং টাইটেল
আপনার ইউটিউব চ্যানেল এর একটা ভিডিওতে কত ভিউ পড়বে কিংবা কতজন ভিজিটর এই বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবে তার শতভাগ নির্ভর করে আপনার কনটেন্ট এর টাইটেল এর উপর।
আপনি যদি যেকোনো ধরনের একটি ভিডিও তৈরি করার আগে একটি ইন্টারেস্টিং টাইটেল নিয়ে চিন্তাধারা করেন, তাহলে ইন্টারেস্টিং টাইটেল আপনার ভিডিও এর মোড় ঘুরিয়ে দিবে।
কারণ যে কেউ আপনার ভিডিও এর উপরে ক্লিক করার আগে অবশ্যই এই ভিডিওতে ব্যবহার করা টাইটেল আগে পড়ে এবং তারপর এটির উপর ক্লিক করবে কিনা এটা চিন্তা ভাবনা করে।
আপনি যদি একটি ইন্টারেস্টিং টাইপের টাইটেল তৈরি করেন উদাহরণ স্বরূপ এরকমভাবে একটি টাইটেল করেন- “সকালে দৌড়ানোর ৭টি উপকারিতা। নাম্বার ৬ আপনাকে চমকে দেবে।”
তখন হয়তো সবাই এটা ভাববে যে আমরা তো জানি সকালে দৌড়ানোর উপকারিতা রয়েছে, কিন্তু নাম্বার ৬ আসলে কোন উপকারিতার কথা বলা হয়েছে?
এই কৌতূহলে তারা আপনার ভিডিও এর উপর ক্লিক করবে।
আর যখনই আপনার ভিডিওর উপরে ক্লিক করবে তখন তারা যদি এটা পছন্দ করে তাহলে আপনার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে।
ভিজিটরের প্রশ্নের উত্তর
আপনি যখন একটি ভিডিও তৈরি করেন তখন হয়তো আপনার ওই ভিডিও এর কমেন্ট সেকশনে বিভিন্ন ধরনের ভিজিটরের নানারকম অভিমত কিংবা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়।
আপনি যখন ঐ সমস্ত সমস্যাগুলো সমাধান কমেন্ট বক্সে দিয়ে দিবেন আপনার গুরুত্বপূর্ণ রিপ্লাই এর মাধ্যমে, তখন তারা আপনার চ্যানেল প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হবে।
শুধু তাই নয়, আপনি চাইলে অন্যান্য যে সমস্ত বড় বড় চ্যানেল রয়েছে সেই সমস্ত চ্যানেলের কমেন্ট সেকশন চেক করার মাধ্যমে আপনার ভিডিও তৈরীর আইডিয়া পেয়ে যেতে পারেন।
আপনাকে ঐ সমস্ত ভিজিটরের সমস্যাগুলো নিয়ে একটি ভিডিও তৈরি করতে হবে এবং তারপরে ইউটিউব এ পাবলিশ করার মাধ্যমে আপনি তাদের সমস্যার সমাধান যখন দিয়ে দিবেন তখনই আপনার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
আর মূলত উপরে উল্লেখিত উপায়ে আপনি চাইলে খুব সহজেই আপনার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব বৃদ্ধি করতে গিয়ে যে ভুল গুলো কখনোই করবেন না
আপনি যখনই এটা চাইবেন যে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করতে এবং তা খুব কম সময়ের মধ্যে তখনই আপনি রাতারাতি কোন ভুল করতে যাবেন না।
এই ভুলগুলো আপনার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি হওয়ার পথে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং যখন সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি হয়ে যাবে তখন কমতে শুরু করবে।
- অহংকারী মেজাজি না হওয়া
- সাবস্ক্রাইবারদের গুরুত্ব দেওয়া
- কাউকে কটু কথা না বলা
- আপনার খারাপ বৈসাদৃশ্য তুলে না ধরা
আপনি যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো নেগেটিভলি আপনার চ্যানেলের মধ্যে প্রকাশ করেন তাহলে এগুলো আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
তাই আর দেরি না করে এখুনি আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার বৃদ্ধি করার জন্য যে সমস্ত বিষয় গুলো আলোচনা করেছি, এগুলো আপনার চ্যানেলে ফুটিয়ে তুলুন।
এতে করেই আপনি কম সময়ের মধ্যে আপনার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারবেন।