আমাদের বর্তমান সময়ের যে সমস্ত প্রজন্ম রয়েছে, সে সমস্ত প্রজন্মের মধ্যে থেকে প্রায় অনেকেই ফেসবুক আসক্তিতে ভোগেন। ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় কি?
আপনি যদি ফেইসবুকে আসক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো ফেসবুকে চলে যাবে এবং দিনশেষে আপনি অসহায়ত্ব ভূগবেন।
এটা সত্য যে, আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি জিনিসের প্রতি খুব বেশি সময় ধরে মনোনিবেশ করেন, তাহলে সেই বিষয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয়।
আর আপনি যদি ফেসবুকের প্রতি আসক্ত হয়ে যান, তাহলে এই আসক্তি থেকে যতক্ষণ আপনি বের হয়ে আসতে পারবেন, ততক্ষন না আপনার জন্য এই আসক্তি কাল হয়ে দাঁড়াবে।
ফেসবুক আসক্তি কি? এবং ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত, আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনা করা হবে, ইনশাল্লাহ।
পোস্টের ভিতরে যা থাকছে
ফেসবুক আসক্তি কি?
ফেসবুক বলেন বা যেকোনো বিষয়কে আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ব্যবহার করেন, এবং সেটা যদি আপনার ব্যাক্তি জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে সেটিকে আসক্তি বলে গণ্য করা হয়।
আপনি যদি রাত্রে বেলা ঘুম ভাঙ্গার পরে ফেসবুকের নোটিফিকেশন চেক করেন কিংবা সকালে ঘুম ভাঙ্গার পরে নোটিফিকেশন চেক করেন, স্কুলের ফাঁকে নোটিফিকেশন চেক করেন কিংবা ফেসবুকে ঢু মারেন, তাহলে আপনি ফেসবুকে আসক্ত।
এবং আপনি যদি ফেইসবুকে আসক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে সেটিকে ফেসবুক আসক্তি বলা হয়।
ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হওয়া কি সম্ভব?
মানুষ পারে না এরকম খুবই কম জিনিস পৃথিবীতে রয়েছে। মানুষ চাইলে সব কিছুই করতে পারে, যা করার ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন।
অর্থাৎ আপনি চাইলেই ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য পরিশ্রম করতে হবে এবং অধ্যাবসায় অর্জন করতে হবে।
আজকের এই আর্টিকেলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস সম্পর্কে আলোচনা করা হবে, যে সমস্ত টিপস ফলো করার মাধ্যমে আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
মোবাইল ফোনের নোটিফিকেশন সাউন্ড বন্ধ করে দেয়া
আপনি শেষে যখন কোন একটি কাজ করার সময় ফেসবুকে ঢু মেরেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই কোন একটি নোটিফিকেশনের কারণে আপনার মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়েছিলেন?
এবং যখনই আপনি নোটিফিকেশন দেখার উৎসাহ নিয়ে মোবাইল ফোনটি হাতে নিয়েছিলেন এবং নোটিফিকেশন টি দেখার জন্য ফেসবুকে চলে গিয়েছিলেন, তখন আপনার কয়েক ঘন্টা চলে গিয়েছিলো।
তাহলে, সর্বশেষ ফেসবুকে প্রবেশ করার জন্য কোন বিষয়টি আপনাকে সহায়তা করেছে? নিশ্চয়ই সর্বশেষের সেই নোটিফিকেশনটি।
নোটিফিকেশনের বাজনা যদি আপনার কানে না আসে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই ফেসবুকে প্রবেশ করছেন না এবং আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ২ ঘন্টা নষ্ট করতেন না।
সেজন্য, ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সর্বপ্রথম এবং সর্ব প্রধান, ফেসবুকের মাধ্যমে যে সমস্ত নোটিফিকেশন আপনার মোবাইল ফোনে আসে সে সমস্ত নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখেন।
এছাড়াও আপনি যখন কাজ করবেন, তখন আপনি চাইলে আপনার মোবাইল ফোনের DND মুড অন করে রাখতে পারেন। আপনি যদি এই অপশনটি অন করে রাখেন, তাহলে নোটিফিকেশন সাউন্ড আপনার কানে পৌছাবেনা।
আপনার ফোনে যদি এই অপশনটি না থাকে, তাহলে আপনি চাইলে ম্যানুয়ালি ফেসবুক থেকে নোটিফিকেশন অফ করে দিতে পারেন।
ফেসবুক একটিভিটি কমিয়ে ফেলা
এখানে অ্যাক্টিভিটি বলতে বোঝানো হয়েছে, আপনি যদি ফেসবুকে খুব বেশি পরিমাণে বন্ধুবান্ধব অ্যাড দিয়ে রাখেন,কিংবা খুব বেশি রকমের গ্রুপে যুক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে সেগুলো রিমুভ করে দেয়া।
কারণ, আপনি যখন বেশি সংখ্যক গ্রুপ এবং ফেসবুক ফ্রেন্ড এর সহায়তায় একটি আইডি তৈরি করবেন, তখন সেই আইডিতে চলে যাওয়ার পরে আপনার সময় চলে যাওয়াটা খুবই সাধারন একটি ব্যাপার।
কাজেই, আপনি যদি কোন রকমের জটিলতা এড়াতে চান এবং সময় নষ্ট করতে চান, তাহলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট প্রোফাইল রেস্ট্রিকশন করে রাখুন।
এবং এমনভাবে আপনার প্রোফাইলের গ্রুপ এবং বন্ধুবান্ধব রাখুন, যাতে করে সেগুলোর দিকে নজর যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
যে সমস্ত বন্ধুবান্ধবকে ফেইসবুকের না রাখলে নয়, সে সমস্ত বন্ধ বান্ধব কে আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড হিসেবে রাখুন এবং অপরিচিত অযাচিত ফ্রেন্ড এবং গ্রুপ থেকে লিভ নিয়ে নিন।
তাহলে, এই কাজে ফেসবুকে আসক্তি কমে আসবে এবং আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে অনেকাংশে মুক্তি পেতে পারবেন।
লাইক কমেন্ট এবং প্রোফাইল চেক না করা
অনেকেরই এরকম অভ্যাস রয়েছে যে, কেউ লাইক কমেন্ট করলে সেটি ঘেঁটে ঘেঁটে দেখে এবং যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের লাইক কমেন্ট করেছে তাদের প্রোফাইলে চলে যায়।
এবং যখন আপনি কারো প্রোফাইলে চলে যাবেন, তখন আপনার সময় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায় এবং আপনার ফেসবুক আসক্তির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
সেজন্য ফেসবুকে যে সমস্ত ভার্চুয়াল রিওয়ার্ড কিংবা ফেক রিওয়ার্ড আছে, অর্থাৎ লাইক কমেন্ট রয়েছে, সেগুলো দেখা থেকে বিরত থাকুন এবং অন্য কারো প্রোফাইলে সারাক্ষণ ভিজিট করার চিন্তাবৃত্ত থেকে বিরত থাকুন।
তাহলে ফেসবুক থেকে আপনি মন সরাতে পারবেন, এবং আসক্তির মাত্রা কমিয়ে আনতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় আপনার কাজে আসবে।
ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার আনইন্সটল করা
আপনি যদি ফেসবুক ব্যবহার করেন এবং ফেসবুকে অনেক জনের সাথে একটি কনভাসেশনাল বন্ধুত্ব তৈরী করেন, তাহলে ফেসবুক মেসেঞ্জার আপনাকে ফেসবুক তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।
অর্থাৎ, এই ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ফেসবুকের সাথে রিলেশনশিপ আরো বেশি বিল্ডআপ হবে।
আপনি যেহেতু ফেইসবুক ডিলিট করতে পারবেন না, এবং শুরুতেই ফেসবুক ব্যবহার করা থেকে চিরতরে মুক্তি হতে পারবেন না, সেজন্য আংশিক মুক্ত হওয়ার জন্য ফেসবুক মেসেঞ্জার ডিলিট করে দিন।
তাহলে, যখন মেসেজ আসবে তখন ফেসবুকে চলে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না এবং আপনি ম্যাসেজ আসার পরেও সেটি দেখে নিতে পারবেন না, যাতে করে আপনি ফেসবুকে চলে যেতে পারবেন না।
যদি খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে, তাহলে ফেসবুক সফটওয়্যার ব্যবহার করার মাধ্যমে, কারো মেসেজের রিপ্লাই দিতে পারেন এবং কনভারসেশন করতে পারেন।
আমি আপনাকে কি বলেছি মনে আছে? ফেসবুক মেসেঞ্জার ডিলিট করে দিন এবং এখনই ডিলিট করে দিন।
বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারকে সময় দিন
ফেসবুক আসক্তি থেকে এবং ভার্চুয়াল জিনিসগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় হল,যেকোন রকমের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করা।
অর্থাৎ আপনি চাইলে আপনার বন্ধু-বান্ধব কে সময় দিতে পারেন, চাইলে আপনার ফ্যামিলিকে সময় দিতে পারেন।
যখনই আপনি আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবারকে সময় দিবেন এবং তাদের সাথে বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এটেন্ড করবেন, তখন আপনার সময় ওই কাজেই চলে যাবে।
আর এই কাজগুলো করার সময় দেখবেন, ফেসবুক ব্যবহার করার কথা ভুলে যাবেন এবং ফেসবুক আসক্তি এভাবে কমে যেতে শুরু করবে।
আসক্তি কমানোর জন্য আপনি চাইলে আপনার পরিবারকে সময় দিতে পারেন এবং তাদের সাথে বিভিন্ন রকমের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি করতে পারেন।
রাতে ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল ফোন হাতে না নেয়া
ফেসবুক আসক্তি বৃদ্ধি এবং আপনার সময় নষ্ট করার আরেকটি কারণ হল রাতে ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল ফোন হাতে নেন।
যখনই রাতে মোবাইল ফোনটি হাতে নিবেন, তখন আপনার বেশকিছু ঘন্টা এমনিতেই চলে যাবে এবং এই সময়গুলো যদি ফেসবুকে চলে যায়, তাহলে সেটি আসক্তি আরো বেশি বাড়িয়ে তুলবে।
সেজন্য, রাতে ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল ফোন হাতে নেয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনি চাইলে বই পড়তে পারেন এবং বই পড়ার মাধ্যমে সহজেই ঘুমিয়ে যেতে পারেন।
তবে আপনি যদি বইপ্রেমী না হন এবং বই পড়তে আপনার যদি ভালো না লাগে, তাহলে আপনি এমনিতেই চোখ বন্ধ করে রাখতে পারেন।
দেখবেন, কোন এক সময় ঘুম চলে আসবে এবং আপনি ঘুমিয়ে যাবেন।
সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে মোবাইল ফোন হাতে নেয়া নেয়া
আপনার সময় নষ্ট করার একটি কারণ হলো, সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে মোবাইল ফোন হাতে নেয়া।
আপনি যদি সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে মোবাইল ফোন হাতে নেন, এবং ফেসবুক ব্যবহার করা অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে সেটি পরিহার করুন এবং সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে সুন্দর সময়টুকু উপভোগ করুন।
যখনই, আপনি সময়গুলো মোবাইল ফোন ছাড়া উপভোগ করতে পারবেন, তখন আপনি এটা রিয়েলাইজ করবেন যে সময় কতটা ভালো যাচ্ছে এবং আপনি ফেসবুক থেকে কতটা দূরে আছেন।
উল্লেখিত উপায়গুলো কি যথেষ্ট ফেসবুক থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য?
এটা সত্য, উপরে উল্লেখিত উপায়গুলো আপনাকে সহায়তা করবে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। তবে পরিপূর্ণভাবে আপনি যদি আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে এই কাজটি আপনাকে করতে হবে।
কারণ, আপনি যদি দুই দিন উপরে উল্লেখিত অভ্যাসগুলো ফলো করেন এবং তৃতীয় দিনের দিন সেই পুনরায় ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করে দেন, তাহলে এটি আপনার জন্য এফেক্টিভ হবে না।
প্রথমত, দৃঢ় মনোবল সেটাপ করে নিতে হবে যে, আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্ত হতে চান এবং আপনি মুক্ত হতে পারবেন। তাহলে ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার পরে কাজে আসবে।
যখনই আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করবেন এবং আপনার লক্ষ্য স্থির রাখবেন এবং কঠোর অধ্যাবসায়ী হবেন, তখন আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।
এছাড়া, উপরে উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও আপনি নিজেই বুঝতে পারেন যে কোন কোন কারণে আপনাকে ফেসবুকাসক্ত করছে?
যখন আপনি ফেসবুক আসক্ত হওয়ার সঠিক কারন গুলো খুজে বের করতে পারবেন এবং এই কাজ গুলো এড়িয়ে চলবেন, তখন আপনি ফেসবুক আসক্তি থেকে মুক্তির উপায় জেনে ফেসবুক আসক্ত থেকে মুক্ত হতে পারবেন।
পরিশেষে একটা তীতা কথা বলা যাক, সেটি হলঃ যেহেতু আসক্ত আপনি হয়েছেন, সেজন্য আসক্তি থেকে মুক্তি আপনাকেই হতে হবে। এজন্য আমরা সাহায্যকারী মাত্র।