আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেসে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই ওয়েবসাইট তৈরি করার ক্ষেত্রে ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করতে হবে।
ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করার পূর্বে কোন ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি থেকে ওয়েব হোস্টিং করার সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে? এবং কোন হোস্টিং ক্রয় করলে আপনি কোন রকমের অসুবিধার মধ্যে পড়বেন না? সেটি যাচাই করা একটি যুগান্তকারী কাজ।
কারণ, আপনি যদি ভুল কোন হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং ক্রয় করে ফেলেন এবং তারপরে এটা দিয়ে আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট মেইনটেইন করেন, তাহলে আপনি কোন এক সময়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন।
আজকের এই আর্টিকেলের বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে, কিভাবে আপনি একটি সঠিক কোম্পানি খুঁজে বের করতে পারবেন? যাতে করে পরবর্তীতে কোনরকমে অসুবিধার মধ্যে না পড়েন।
পোস্টের ভিতরে যা থাকছে
ওয়েব হোস্টিং কি?
ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে এক কথায় বলতে গেলে, এটি হল World Wide Web এর ভিতর কোন ওয়েবসাইটের জন্য একটি জায়গা ভাড়া নেওয়া বা কিনে নেওয়া বুঝায়।
অর্থাৎ ইন্টারনেটে কোনো একটি জায়গায় আপনি নিজের করে নিলেন এবং সেই জায়গায় আপনার পছন্দ অনুযায়ী ইনফোরমেশন জায়গা করে নিলেন।
ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি কিভাবে যাচাই করব?
যে কোন কোম্পানির কাছ থেকে আপনি যখন হোস্টিং ক্রয় করবেন, তখন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যদি পূর্বে থেকে যাচাই করে নেন, তাহলে আপনি ঠকে যাওয়া থেকে বেঁচে থাকবেন।
আর সেই বিষয়গুলো হলোঃ
- হোস্টিং কোম্পানির আপ টাইম।
- ইউজার কন্ট্রোল প্যানেল।
- এক ক্লিকে ওয়েব অ্যাপ ইনস্টল।
- সার্ভার আপডেট সুবিধা।
- মানিব্যাক গ্যারান্টি।
- সাপোর্ট (স্পেশালি লাইভ চ্যাট রয়েছে কিনা)
- হোস্টিংয়ের প্রাইস।
- কাস্টমার রিভিউ ইত্যাদি।
উপরে যে সমস্ত বিষয়ের কথা মেনশন করা হয়েছে, সে সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে আপনার হোস্টিং কোম্পানির যদি পজিটিভ অবস্থানে থাকে, তাহলে আপনি নিঃসন্দেহে সেই কোম্পানিকে বেছে নিতে পারেন।
তাহলে আর দেরি না করে এখনি জেনে নেয়া যাক এসমস্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে।
হোস্টিং কোম্পানির আপ টাইম
যখনই আপনি কোন একটা কোম্পানি থেকে Hosting কিনবেন, তখন আপনাকে প্রথমত এই বিষয়ে সম্পর্কে অবগত হতে হবে যে এই কোম্পানির আপ টাইম কত সময়?
একটি ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড ঠিক রাখার ক্ষেত্রে ৯৯.৯৯% সার্ভার আপটাইম অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
এজন্য আপনি যে ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং ক্রয় করবেন, সে ওয়েব হোস্টিং কোম্পানির আপটাইম গ্যারান্টি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকবেন। তাহলে ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।
ইউজার কন্ট্রোল প্যানেল
আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট কতটা মেনেজ করতে পারবেন, সেটা পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করবে কন্ট্রোল প্যানেলের উপরে।
সে কোন কোম্পানি থেকে হোস্টিং করার পূর্বে কন্ট্রোল প্যানেল সম্পর্কে অবগত হয়ে যান। কারণ, এখান থেকেই আপনি আপনার সমস্ত ওয়েবসাইট মেনটেন্স করবেন।
কন্ট্রোল প্যানেল থেকেই, যে সমস্ত জিনিস আপনার ওয়েবসাইটে আপডেট করা দরকার, সেগুলো আপডেট করতে পারবেন এবং সমস্ত জিনিস গুলো ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেয়া দরকার সেগুলো সরিয়ে দিতে পারবেন।
কাজেই, এমন একটি হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করুন, যারা মূলত সার্ভিস প্রদান করে cPanel এবং Integrated Client Area থেকে। যেটা অনেক Lightweight, User-Friendly এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য।
কোন হোস্টিং কোম্পানিতে উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো যদি পেয়ে যান, তাহলে তাকে পছন্দের লিস্টে একধাপ এগিয়ে রাখতে পারেন।
এক ক্লিকে ওয়েব অ্যাপ ইনস্টল
এছাড়াও হোস্টিং কোম্পানি তে যদি এক ক্লিকে ওয়েব অ্যাপ ইন্সটল করার সিস্টেম থেকে থাকে, তাহলে সেটি আপনার পছন্দের লিস্টে থাকবে।
উদাহরণস্বরূপ কোম্পানিগুলোর ড্যাশবোর্ডে softaculous App install থাকে। যেটার মাধ্যমে এক ক্লিকে যে কোন রকমের প্লাটফর্মে দাঁড় করানো যায়।
সার্ভার আপগ্রেড সুবিধা
প্রথমত, যখন আপনার ওয়েবসাইটে সেরকম কোন ভিজিটর থাকবেনা তখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটে শেয়ারেড হোস্টিং ব্যবহার করতে পারেন।
কারন ওয়েব সাইটে ভিজিটর কম থাকলে এই হোস্টিং এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট সহজেই Run করানো যায়। কিন্ত যখন আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর বৃদ্ধি পাবে, তখন আপনার ওয়েবসাইটের সার্ভার আপগ্রেড করতে হবে।
এবং সার্ভার আপডেট করার সুবিধা যদি কোনো একটি কোম্পানিতে না থাকে, তাহলে সেটি আপনার জন্য হানিকারক হতে পারে।
কাজেই, যে সমস্ত ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিতে সার্ভার আপগ্রেড সুবিধা রয়েছে সে কোম্পানিগুলোকে আপনার পছন্দের লিস্টে রাখতে পারেন। অন্যথায়, এ সমস্ত কোম্পানি এভয়েড করতে পারেন।
মানিব্যাক গ্যারান্টি
কোন কোম্পানি থেকে আসা বা যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে আপনি মানিব্যাক গ্যারান্টি আশা করবেন। অনেক কোম্পানিই এই সেবাটি দিয়ে থাকে আবার অনেক কোম্পানি এই সেবা দেয় না।
তবে, আপনার বেছে নেয়া কোম্পানির যদি এই সেবাটি দেখেন বা তারা যদি এই সেবা না দেয়, তাহলে সেটির উপরে সেই ওয়েব হোস্টিং কোম্পানির মান এবং গুনাগুন নির্ভর করবে না।
তবে মানিব্যাক গ্যারান্টি, আশা করাই যায়।
সাপোর্ট – স্পেশালি লাইভ চ্যাট রয়েছে কিনা?
যখনই আপনি আপনার ওয়েবসাইট নিয়ে কোনো রকমের অসুবিধার মধ্যে পড়বেন, তখন সেই রিলেটেড সাপোর্টের প্রয়োজন হতে পারে।
ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করে নেয়ার পরে যদি আপনার ওয়েবসাইট কাজ না করে , তাহলে সেই রিলেটেড সাপোর্ট নেয়ার জন্য লাইভ চ্যাট কিংবা অন্যান্য উপায়ে তাদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
সেজন্য কোন একটি কোম্পানি থেকে হোস্টিং ক্রয় করার পূর্বে, অবশ্যই তাদের সাপোর্ট সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান। যে কোম্পানির সাপোর্ট যত বেশি দুর্বল, সেই কোম্পানি থেকে সফলতা আশা করা তত বেশি বোকামি।
কোন একটি হোস্টিং কোম্পানি কতটা একটিভ রয়েছে কিংবা কতটা সফল সেটি পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করে তাদের কাস্টমার সাপোর্ট এর উপরে।
কারণ, যেকোন একটা সমস্যা নিয়ে কাস্টমার বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়তেই পারে এবং সেই বিভ্রান্তি দূর করার একমাত্র দায়িত্ব হলো হোস্টিং কোম্পানির দায়িত্বরত লোকদের।
কাজেই, আপনি যদি এরকম কোন একটি কোম্পানি দেখতে পান যে কোম্পানিতে সাপোর্ট ব্যবস্থা খুবই দুর্বল, তাহলে সেটি এড়িয়ে চলুন।
তবে, এই যে সমস্ত কোম্পানিতে লাইভ চাট সাপোট রয়েছে এবং ইন্সট্যান্টলি সাপোর্ট দেয়া হয়, সে সমস্ত কোম্পানিগুলোর আপনার পছন্দের তালিকায় রেখে দিন।
কারণ, আপনি যদি সমস্যায় পড়ে, সাপোর্ট নিতে না পারেন, তাহলে সেই সমস্যা নিয়েই আপনাকে পরে থাকতে হবে। আপনার কাজের কাজ কিছুই হবে না।
এজন্য কোন একটি হোস্টিং কোম্পানি বেছে নেয়ার জন্য প্রথমত তাদের লাইভ চ্যাট সাপোর্ট কিংবা তাদের সাপোর্ট ব্যবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
ভালো ভালো যে সমস্ত কোম্পানি রয়েছে, সে সমস্ত কোম্পানিতে আপনি লাইভ চ্যাট সাপোর্ট ব্যবস্থা পাবেন।
হোস্টিংয়ের প্রাইস
কোন একটি কোম্পানি কতটা সবল কিংবা দুর্বল সেটির সিংহভাগ আপনি তাদের প্রাইসের সীমা দেখলে বুঝতে পারবেন।
অনেক কোম্পানি দেখতে পারবেন, যে সমস্ত কোম্পানি গুলো খুবই স্বল্প টাকার বিনিময়ে আপনাকে হোস্টিং দিয়ে দেয়। সে সমস্ত সার্ভারগুলো নিউলড এবং ক্রাক সার্ভার।
কমদামি হোস্টিং থেকে সর্বদা ১০০ হাত দূরে থাকবেন। কারণ কমদামি যে সমস্ত হোস্টিং বিক্রেতা রয়েছেন, তারা প্রায় সময় আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেয়া থেকে বঞ্চিত করেন।
কাস্টমার রিভিউ
কোন একটি কোম্পানি কতটা ভালো কিংবা খারাপ সেটি যদি আপনি জেনে নিতে চান, তাহলে এই কোম্পানি থেকে যে সমস্ত কাস্টমাররা সেবা নিয়েছেন, তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
কারণ, আপনি তাদের কাছ থেকে অন্য একটি সেবা নেয়ার পূর্বে এই কোম্পানি থেকে যে সমস্ত ভুক্তভোগী রয়েছেন, তাদের মন মেজাজের অবস্থা দেখে নিলেই আপনি তাদের সম্পর্কে সিংহভাগ জেনে যাবেন।
তবে, সত্যি বলতে কি এরকম অনেকেই রয়েছেন, যারা ভাল সেবা পাওয়ার পরেও কোম্পানির খারাপ গুণগান গেয়ে থাকেন।
সেজন্য, নিশ্চিত হতে বেশ কিছু রিভিউ দেখে তারপরে কনফার্ম হয়ে যেতে পারেন।
উপরে যে সমস্ত বিষয় গুলোর কথা মেনশন করা হয়েছে, সে সমস্ত বিষয় গুলো যদি আপনার মাথায় থাকে এবং তারপরে আপনি যদি হোস্টিং ক্রয় করতে যান, তাহলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
কারন, কোন কোম্পানিতে যদি উপরে উল্লেখিত গুনাগুন থেকে থাকে, তাহলে সে কোম্পানি অবশ্যই ভালো একটি কোম্পানি। এবং সেখান থেকে ওয়েব হোস্টিং নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
এখানে যে সমস্ত গুণাগুণের কথা মেনশন করা হয়েছে, যে সমস্ত গুণাগুণের মধ্যে থেকে একটি বা দুটি যদি সেই কোম্পানিতে না থাকে, তাহলে ঘাবড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
হয়তো তারা এই বিষয়গুলোর উপর নজর দেয়ার চেষ্টা করছে এবং খুব শীঘ্রই তারা এগুলো তাদের কোম্পানিতে সম্পৃক্ত করে ফেলবে।
আমার জানা মতে ভালো হোস্টিং কোম্পানি
আমার নিজস্ব অভিমত এ যে সমস্ত কোম্পানি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দের এবং যাদের কাছ থেকে হোস্টিং ক্রয় করা নিজস্ব অভিমতে মনে করি ভাল হবে, তাদের কয়েকটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক নিচে তুলে ধরলাম।
বাংলাদেশি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি
বাংলাদেশের যে সমস্ত বিশ্বস্ত হোস্টিং কোম্পানি রয়েছে, যাদের কাছ থেকে আপনি হোস্টিং ক্রয় করতে পারেন। তাদের মধ্যে থেকে কয়েকটি কোম্পানির লিঙ্ক নিচে তুলে ধরা হলো।
উপরে উল্লেখিত লিংকগুলো বর্তমান সময়ে পরীক্ষিত এবং এ সমস্ত কোম্পানির বেশ কিছু বছর যাবৎ সেবা দিয়ে আসছে।
তবে তারপরেও আপনি যখন এই আর্টিকেলটি পড়বেন তখন তাদের পুনরায় যাচাই করে নিবেন।
বিদেশি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি
এছাড়াও পৃথিবীব্যাপী যে সমস্ত হোস্টিং কোম্পানির খুবই জনপ্রিয় এবং খুব ভালো সাপোর্ট এবং হোস্টিং দিয়ে আসছে তাদের মধ্যে থেকে কয়েকটি কোম্পানির লিঙ্ক নিচে তুলে ধরা হলো।
উপরে যে সমস্ত হোস্টিং কোম্পানি লিংক তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো বিশ্বস্ততার সাথে বহুকাল যাবৎ হোস্টিং সেবা দিয়ে আসছে।
তবে, আমার কথা একটাই আর সেটি হল, তাদের কাছ থেকে বর্তমান সময়ে হোস্টিং নেয়ার পুর্বে তাদেরকে পুনরায় যাচাই করে নিন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এসমস্ত হোস্টিং কোম্পানি সাথে আমাদের কোন লেনদেন নেই। কোন কারণে আপনি যদি অসুবিধার শিকার হন, তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ সেজন্য দায়ী হবে না।
শেষকথাঃ একজন নতুন হোস্টিং ক্রেতা হিসেবে আপনি যে সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন সেটি হল,৷ ভাল হোস্টিং কোম্পানি নির্বাচন করা।
তবে আপনি যদি উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো কোন একটি হোস্টিং কোম্পানির মধ্যে পেয়ে যান, তাহলে নির্দ্বিধায় সেই কোম্পানি থেকে ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করতে পারেন।
তারপরেও তাদের কাস্টমার রিভিউ এবং অন্যান্য বিষয়গুলো ভালভাবে যাচাই করে নেয়ার পরে হোস্টিং কেনার দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন।