তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, নিয়ম এবং ফজিলতসমুহ |

তাহাজ্জুদ নামাযের রাকআত সংখ্যা-

      
সর্ব নিম্ন দু রাকআত। আর সর্বোচ্চ ৮ রাকআত পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদের ৮ রাকাত নামায আদায় করার পরে, বিতর ৩রাকাত নামায পড়া। রাসুল (সাঃ) তাহাজ্জুদের নামায বেশিরভাগ সময় ৮রাকাত পরতেন এবং এঁর পর বিতরের নামায পরে মোট ১১রাকাত পূর্ণ করতেন।
     
১। তাহাজ্জুদ নামায বিতরসহ ১৩, ১১, ৯ কিংবা ৭ রাকাত পড়া যায় (বুখারী, মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
     
২। প্রথমে দু’রাকাত ছোট ছোট সুরা মিলিয়ে হালকাভাবে পড়ে আরম্ভ করবে (মুসলিম, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
     
৩। অতঃপর দু’রাকাত করে, তাহাজ্জুদের নামায সাত রাকাত পড়তে চাইলে দু’সালামে চার রাকাত পড়ে তিন রাকাত বিতর পড়বে । (বুখারী, মেশকাত ১০৬ পৃঃ)
    
 বিঃদ্রঃ- যদি এশার নামায পরে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুত নামায পড়ার পড়ে বিতর নামায পড়ার দরকার নেই। তখন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮রাকাত তাহাজ্জুত নামায পরলেই হবে।
      
 বিঃদ্রঃ- যদি এশার নামায পরে বিতরের নামায পড়ে থাকেন, তবে তাহাজ্জুত নামায পড়ার পড়ে বিতর নামায পড়ার দরকার নেই। তখন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৮রাকাত তাহাজ্জুত নামায পরলেই হবে।
  
☆☆তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়-     
হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত, আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম, অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন (মুসলিম) । তারপর নীচের দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন । তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
      
(১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
     
(২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
     
(৩) দশবার সুব্‌হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
     
(৪) দশবার সুব্‌হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
     
(৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
     
(৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ নেই)
     
(৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন দীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া দীক্বি ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)

দোয়া সমূহ



জায়নামাজের দোয়া


ইন্নি ওয়াজজাহতু ওয়াজিহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওাতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশ্রেকিন



অর্থ হল : নিশ্চই আমি তারই দিকে মুখ করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং বাস্তবিকই আমি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত নই।

নামাজের নিয়ত



নামাজের ইচ্ছা করাই হচ্ছে নামাজের নিয়াত করা।মুখে উচ্চরণ করা জরুরী নয়, তবে মুস্তাহাব।


তাকবীরে তাহরীমা-আল্লাহু আক বার, অর্থ -আল্লাহ মহান।


সানাঃ (হাত বাধার পর এই দোয়া পড়তে হয় )


উচ্চরণ : সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহাম দিকা ওয়াতাবারঅ কাস্ মুকা ওয়া তা’আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুকা ।


অর্থ হে আল্লাহ ! আমি আপনার পবিত্রতা ঘোষনা করছি এবং আপনার মহিমা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বরকতময়, আপনার মাহাত্ম্য সর্বোচ্চ এবং আপনি ভিন্ন কেহই ইবাদতের যোগ্য নয়।

তাআ’উজঃ



উচ্চরণ – আউযুবিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।


অর্থ ঃ বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।

তাসমিয়াঃ



উচ্চরন ঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।


অর্থ ঃ পরম দাতা ও দয়ালূ আল্লাহর নামে শুরু করছি।

রুকুর তাসবীহঃ


উচ্চরণ : সুবহা-না রব্ বি ‍ইঃয়াল আ’জ্বীম।


অর্থ ঃ মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহাত্মতা ঘোষনা করছি।



তাসমী ঃ (রুকু থেকে দাড়ানোর সময় পড়তে হয় )


উচ্চরণ ঃ সামি আল্লা হুলিয়াম হামিদাহ,


অর্থঃ প্রশংসাকারীর প্রশংসা আল্লাহ শোনেন।

তাহমীদঃ (রুকু থেকে দাড়িয়ে পড়তে হয় )


উচ্চরণ : রাব্বানা লাকাল হামদ ।


অর্থ -হে আমার প্রভু,সমস্ত প্রশংসা আপনারই।




সিজদার তাসবীহঃ


উচ্চরণঃ সবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা।


অর্থ : আমার প্রতিপালক যিনি সর্বশ্রেষ্ঠ, তারই পবিত্রতা বর্ণনা করছি।


দু’সিজদার মাঝখানে পড়ার দোয়া ঃ


উচ্চরণ ঃ আল্লাহ মমাগ ফিরলী ওয়ার হামনি ওয়ার যুক্কনী


অর্থ : হে আল্লাহ,আমাকে ক্ষমা করুন,আমাকে রহমত করুন,আমাকে রিজিক দিন।


[ হানীফি মাযহাবে এই দোয়া পড়া হয় না, কেই যদি হানীফি মাযহাব এর হয়ে থাকেন তাহলে এই সময় এক তসবী পড়তে যে সময় লাগে, সেই সময় পর্যন্ত বিরতি দিয়ে পুনঃরায় সেজদায় যাওয়া ]


তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু ঃ


উচ্চরণ ঃ আত্তাহিয়্যাতু লিল্লা-হি,ওয়াছ ছালা-ওয়াতু,ওয়াত-তাইয়্যিবা তু,আচ্ছালামু আ’লাইকা,আইয়্যুহান নাবিয়্যু,ওয়ারাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ,আচ্ছালামু আলাইনা,ওয়া আ’লা ইবাদিল্লা হিছ-ছা লিহীন। আশহাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু,ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওযা রাসুলুহুাহ।


দরুদ শরীফ ঃ


উচ্চরণ ঃ আল্লাহুম্মা ছাল্লি আ’লা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ-লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজী-দ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আ’লা আ’লি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আ’লা ইব্রহীমা ওয়া আ’লা আ’লি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামিদুম মাজীদ।


দোয়া মাসূরা ঃ


উচ্চরণ ঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী জ্বলামতু নাফসী জুলমান কাছীরও ওয়ালা ইয়াগফিরু যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগ ফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ার হামনী ইন্নকা আন্তাল গাফুরুর রাহীম।


দোয়ায়ে কুনুত ঃ ( বিতরের নামাজের পর তিত্বীয় রাকায়াতে সূরা ফাতিহা ও অন্য কিরআত পড়ার পর এই দোয়া পড়তে হয় )


উচ্চরণ ঃ আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতা’ঈনুকা ওয়া নাসতাগ ফিরুকা, ওয়া নু’মিনু বিকা ওয়া না তা ওয়াক্কালু আলাইকা ওয়া নুছনি আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশকুরুকা,ওয়ালা নাকফুরুকা,ওয়া নাখ লা,ওয়া নাত রুকু মাইয়্যাফ জুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুছাল্লি ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস’আ,ওয়া নাহফিদু ওয়া নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আযাবাকা ইন্না আযা-বাকা বিল কুফ্ফা-রি মুল হিক।




নামাজের শেষে দোয়া ঃ


প্রত্যেক ওয়াক্ত ফরজ নামাজের ছালাম ফিরাইয়া নিম্নোক্ত দোয়া ও দরুদ শরীফ পড়তে হয়


* তিন বার : আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ


লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর,– এক বার


নবীদেরকে সালাম দিতে হয় 1) আচ্ছালাতু আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া ছাইয়েদী ইয়া রাছুলাল্লাহ।


2) আচ্ছালাতু আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া ছাইয়েদী ইয়া নবীয়্যাল্লাহ।


3) আচ্ছালাতু আচ্ছালামু আলাইকা ইয়া ছাইয়েদী ইয়া হাবীবাল্লাহ।


4) ওয়ালা আ’লেকা ওয়াআছহাবেকা ইয়া হাবীবাল্লাহ।


ছুবহানাল্লাহ –তেত্রিশবার, আলহামদু লিল্লাহ— তেত্রিশবার, আল্লাহু আক্বার —- তেত্রিশবার।


এসতেগফার ঃ তিনবার


আছতাগফিরুল্লাহাল্লাজী লা-ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহে।


— ছোবহানাল্লাহে ওয়া বিহামদিহি ছোবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম ওয়া বিহামদিহি আছতাগফিরুল্লাহ।


লা-ইলাহা ইল্লাহ ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর ছুবহানাল্লাহী ওয়াল আলহাদুলিল্লাহী ওয়া লা-ইলাহা-ইল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়া লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। –একবার


ছুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী ওয়া ছুবহানাল্লাহিল আযীম —একবার


লা হাওলা ওলা কুআতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিউল আযীম — একবার


দরুদ শরীফ


আল্লাহুম্মা ছল্লে আলা ছাইয়েদীনা মুহাম্মদিন ওয়াআলা আলে ছাইয়েদেনা মুহাম্মাদিন ওযাবারিক ওয়াছাল্লিম।


জিকির


1) লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (একশত বার)


2) ইল্লাল্লাহ (একশত বার)


3) আল্লাহু (একশত বার)


আয়াতুল কুরসী ঃ একবার


উচ্চরণ ঃ আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা-হুওয়া, আল হাইয়ুল কাইয়ুম,লা-তাখুযুহু ছিনাতুউ-ওয়ালা-নাউম,লাহু-মা-ফিচ্চামাতি ওয়ামা-ফিল আরদি; মান যাল্লাযী-ইয়ামফাউ ইন্দাহু-ইল্লা-বিইয নিহি,ইয়ালামু মা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহী-তুনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহী,ইল্লা-বিমা-শা-আ, ওয়াছআ কুরছিয়ুহুচ্ছামা-ওয়াতি,ওয়াল আরদা, ওয়ালা ইয়াউ-দুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়ুল আযীম।


প্রত্যেক সালাতের পর একবার, সূরা ইখলাস, সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাছঅন্যান্য ব্যক্তিগত,কোরান ও হাদিস থেকে দোয়া করা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top