পোস্টের ভিতরে যা থাকছে
রোজা রাখার নিয়ত
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم
(নাওয়াইতু আন আছুমা গদাম মিং শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আংতাস সামীউল আলীম)
অর্থ: হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজার বাংলা নিয়তঃ
হে আল্লাহ পাক! আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমাদ্বান শরীফ-এর ফরয রোযা রাখার নিয়ত করছি। আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা , সর্বজ্ঞাত।
ইফতারের দোয়া
(আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া তাওয়াক্কালতু আ’লা রিজক্বিকা ওয়া আফতারতু বি রাহমাতিকা ইয়া আর্ হামার রা-হিমীন। )
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্ব দ্বারা ইফতার করছি।
ইফতারের বাংলা দোয়াঃ
হে আল্লাহ তায়ালা আমি আপনার নির্দেশিত মাহে রমাজানের ফরয রোজা শেষে আপনারই নির্দেশিত আইন মেনেই রোজার পরিসমাপ্তি করছি ও রহমতের আশা নিয়ে ইফতার আরম্ভ করছি। তারপর “বিসমিল্লাহি ওয়া’আলা বারাকাতিল্লাহ” বলে ইফতার করা।
রোজার নিয়ত সম্পর্কিত ১০টি জরুরি মাসআলা
০১. রমজানের প্রতিদিনই রোজার নিয়ত করতে হবে। এক দিন নিয়ত করলে পুরো রমজানের জন্য তা যথেষ্ট নয়। (সূত্র : ইলমুল ফিকাহ, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৮)।
০২. রাতেই নিয়ত করা আবশ্যক নয়, করে ফেললে ভালো। নিয়ত করার বিষয়টি মনে না থাকলে সকালে যখন মনে হবে, তখনই নিয়ত করে নিলেও তা হয়ে যাবে।
তবে সেহরির সময় পার হয়ে যাওয়ার পর কোনো কিছু পানাহার করলে বা রোজা ভঙ্গের কোনো কারণ সংঘটিত হওয়ার পর নিয়ত করলে তা আদায় হবে না। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
০৩. রমজানুল মোবারকে মনে মনে শুধু এটুকু ভাবলেই নিয়ত হয়ে যাবে যে আমি আজ রোজা রাখব। নির্দিষ্টভাবে কোনো দোয়া পাঠ করা বা আমি আজ রমজানের ফরজ রোজা রাখছি- এমন কিছু বলা জরুরি নয়। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
০৪. নফল রোজা, নির্দিষ্ট মানতের রোজা এবং রমজানের রোজাসমূহের নিয়ত রাতের বেলা অথবা শরিয়তের ঘোষিত অর্ধদিবস পর্যন্ত করা যাবে। অন্য সব ধরনের রোজার জন্যই রাতের মধ্যেই নিয়ত করে নেওয়া জরুরি। (সূত্র : ফাতাওয়া দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৩৪৬)।
০৫. রমজান মাসে সেহরি খাওয়াটাও রোজার নিয়ত বলে গণ্য হবে। তবে সেহরি খাওয়ার সময় রোজা রাখার ইচ্ছা না থাকলে তা নিয়ত বলে গণ্য হবে না। (সূত্র : কিতাবুল ফিকাহ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৮১)।
০৬. কোনো ব্যক্তি সারা দিন কিছুই পানাহার করেনি, রোজা ভাঙার কোনো কাজও তার মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি; অথচ তার মনে রোজার রাখার কোনো ইচ্ছা ছিল না।
হয়তো তার ক্ষুধাই লাগেনি বা তেমন কিছু করার প্রয়োজন হয়নি। এমন অবস্থায় তা রোজা বলে গণ্য হবে না। তবে মনে মনে রোজা পালনের ইচ্ছা করে থাকলে তা রোজা হয়ে যেত। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
০৭. ইসলামী শরিয়ার আলোকে রোজা শুরু হয় সুবহে সাদিক হতে। তাই সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহারে কোনো আপত্তি নেই। সব কিছুই তখন বৈধ।
অনেকে রাতের শুরুতে বা মাঝামাঝি সময়ে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়েন এবং মনে করেন, রোজার নিয়ত করার পর বা সেহরি খেয়ে ফেলার পর আর কিছু পানাহার করা যাবে না। এমন ধারণা সঠিক নয়।
সুবহে সাদিক উদয় না হওয়া পর্যন্ত পানাহার করতে কোনো দোষ নেই। তা নিয়ত করা হোক বা না হোক। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
০৮. মনের ইচ্ছার নামই নিয়ত। সুনির্দিষ্টভাবে বিশেষ কোনো বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই রাতের বেলায় মনে মনে রোজা রাখার ইচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লে তার জন্য ফের নিয়ত করার প্রয়োজন নেই। (সূত্র : হাশিয়ায়ে ফাতাওয়া দারুল উলুম, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৪৬)।
০৯. মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট, তবে ‘নাওয়াইতু বি সাউমি গাদিম মিন শাহরি রামাদান’ মুখে উচ্চারণ করার মাধ্যমে নিয়ত করা উত্তম। (সূত্র : বেহেশতি জেওর, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩)।
১০. দিনের দ্বিপ্রহরের আগে রোজার নিয়ত করা না হয়ে থাকলে সেই রোজা সহিহ হবে না। এর পরও রোজাহীন অবস্থায় দিনের বাকি সময়ে পানাহার করা রমজানুল মোবারকের সম্মানের বিরোধী বলে তা জায়েজ নয়। (সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৭৩)।
ইফতারের ফজিলত ও তাৎপর্য
ইফতার রমজানের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি এক বিশেষ নিয়ামত। এটি পালন শুধু কর্তব্য নয়, আনন্দও বটে। এতে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।
ইফতারের সময় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, সুবহে সাদিক হতে রাত অবধি রোজা পূর্ণ করো। (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৭) অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোজা শেষ করে ইফতার করা।
একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রোজাদারের দুটি সময় আনন্দের- এক ইফতারের সময়, দ্বিতীয় আল্লাহ সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময়।
‘ইফতার’ আরবি শব্দ, যার অর্থ রোজা ভঙ্গ করা বা সমাপ্ত করা। ইফতার রোজাদারদের জন্য একটি আনন্দময় সময়। ইসলামি পরিভাষায়, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, কামাচার ও পাপাচার থেকে বিরত থেকে সূর্যাস্তের পর কিছু খেয়ে বা পান করে রোজা সমাপ্ত করার নামই ইফতার।
হজরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করে তখন তার খুরমা খেজুর দিয়ে ইফতার করা উচিত। তবে যদি সে খুরমা খেজুর না পায়, তাহলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ, পানি পবিত্র। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুল (সা.) নামাজের আগে ইফতার করতেন কয়েকটি টাটকা খেজুর দিয়ে। যদি তিনি টাটকা খেজুর না পেতেন তাহলে শুকনা খেজুর (খুরমা) দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও যদি না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করা সুন্নত এবং সূর্যাস্তের আগে ইফতারি সামনে নিয়ে বসে থাকা মোস্তাহাব।
সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, মানুষ কল্যাণের সঙ্গে থাকবে তত কাল, যত কাল তারা শিগগির ইফতার করবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
রসুল (সা.) আরো ফরমান, দ্বীন জয়ী থাকবে তত দিন, যত দিন লোক শিগগির ইফতার করবে। কেননা ইহুদি খ্রিষ্টানরা ইফতার করে দেরিতে। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজা শরিফ)
ইফতার সম্পর্কে রসুল (সা.) আরো বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে আমার কাছে অধিকতর প্রিয় তারাই, যারা আগেভাগে ইফতার করে। (তিরমিজি শরিফ)
রোজাদারদের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য তিনি দেরি করে সেহরি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই ইফতার করার নির্দেশ করেছেন। ইফতারের এ বিধান ইসলাম ধর্মেরই অনন্য বৈশিষ্ট্য। ইফতারে ভ্রাতৃত্ববোধ, অন্তর নিঃসৃত ভালোবাসার ছোঁয়া এবং আধ্যাত্মিক ভাবের যে প্রতিফলন ঘটে, তা সত্যিই অতুলনীয়।
ইফতার করার মুস্তাহাব নিয়ম : সূর্যাস্তের পর ইফতারে বিলম্ব করা অনুচিত। কিন্তু আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে সাবধানতার জন্য কিছু সময় বিলম্ব করা উত্তম। খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। তা না হলে অন্য কোনে মিষ্টিদ্রব্য বা শুধু পানি দ্বারা ইফতার করবে। আগুনে পাকানো খাদ্য, রুটি, ভাত, শিরনি ইত্যাদি দ্বারা ইফতার করা দোষের নয়। কিন্তু ফল দ্বারা ইফতার করাই উত্তম।
ইফতার করার আগে এই দোয়া পড়বেন : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়াতা ওয়াক্কালতু আলা রিজকিকা ওয়াআফতারতু বিরাহ্মাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, তোমারই প্রদত্ত রিজিক দ্বারা ইফতার করছি…।’
ইফতার করানোর ফজিলত : রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা সমপরিমাণ সওয়াব ওই ব্যক্তিকে প্রদান করবেন যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে সামান্য দুধ দিয়ে কিংবা খেজুর দিয়ে কিংবা পানির শরবত দিয়ে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো রোজাদারকে পেট পুরে আহার করাবে আল্লাহ তায়ালা (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করবেন। এ পানি পান করার পর জান্নাতে প্রবেশ করার আগে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না। (মিশকাত শরিফ)
অন্য একটি হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি হালাল রুজি দ্বারা কাউকে ইফতার করাবে, ফেরেশতাগণ রমজানের প্রতিটি রাত্রে তার প্রতি রহমত পাঠান। শবেকদরে স্বয়ং জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে মোসাফাহা করেন। যার সঙ্গে জিবরাইল (আ.) মোসাফাহা করেন, তার অন্তর কোমল হয় ও চক্ষু হতে অশ্রু ধারা প্রবাহিত হয়।
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় : রমজান মাসে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অধিক দোয়া, আহাজারি ও কান্নাকাটি করা উচিত। এ মাসে রহমতের দ্বার উন্মুক্ত থাকে, রহমতের বারি জোরেশোরে বর্ষিত হয়। ক্ষমা ও মাগফিরাতের বাহানা তালাশ করা হয়।
আল্লাহর পক্ষ থেকে এ মাসেই আহ্বান জানানো হতে থাকে, ‘আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থী ? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।’
আল্লাহ তো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ‘ইফতারের সময় তোমরা আমার কাছ থেকে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। রাতের আঁধারে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। শেষ রাতে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয়ে যায় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। (আহমদ)