পোস্টের ভিতরে যা থাকছে
জুমার নামাজ এর নিয়ম
জুম’আর নামাজে দুই রাকা’ত ফরজ,যা ইমামের সাথে আদায় করতে হয়। অধিকাংশ আলেমদের মতে, জুম’আর ফরজের পূর্বে চার রাকা’ত কাবলাল জুম’আ এবং ফরজের পরে চার রাকা’ত বা’দাল জুম’আর সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।
এছাড়া মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকা’ত দুখলুল মসজিদ ও দুই রাকা’ত তাহিয়াতুল ওযুর মোস্তাহাব নামাজও উৎসাহিত করা হয়।
জুমার নামাজের বিবরণী
১.মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত তাহিয়াতুল ওযু ও দুই রাকা’ত দুখলুল মসজিদের মোস্তাহাব নামাজ আদায় করবে (ঐচ্ছিক)।
২.চার রাকা’ত কাবলাল জুম’আর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করবে।
৩.ইমামের খুৎবা পাঠ মনোযোগ দিয়ে শুনবে।
৪.ইমামের সাথে দুই রাকা’ত জুম’আর ফরজ নামাজ আদায় করবে।
৫.ফরজ নামাজের পর তাৎক্ষণিক ভাবে মসজিদ ত্যাগ করবে না,বরং চার রাকাত বা’দাল জুম’আর সুন্নত নামাজ একাকী আদায় করবে।
জুম’আর নামাজ ২০ রাকাত
১.দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু।
২.দুই-রাকাত দুখুলুল মাসজিদ।
৩.চার-রাকাত কাবলাল জুমআহ।
৪.দুই-রাকাত ফরজ জুম’আ।
৫.চার -রাকাত বা’দাল জুম’আ।
৬.চার-রাকাত আখেরে জোহর।
৭.দুই-রাকাত ওয়াত্তে সুন্নত।
দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নিয়ত সমূহঃ
আরবি-উচ্চারন
نَوَايْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّّهِ تَعَالَى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ التَّحِيَّةُ الْوُضُوْءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
বাংলা-উচ্চারন
নাওয়াইতুয়ান উসালি্লয়া লিল্লা-হি তা’আ-লা রাকাআতাই ছালাতিল তাহিয়্যাতুল অজু সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়াল মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা অর্থ
দুই-রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হ
য়ে নিয়্যত করলাম, আল্লাহু আকবার।
জুমু’ আর নামাজের ফজিলতঃ
জুমু‘আর দিন গোছল করা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া।
কেননা রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الجُمُعَةَ، فَلْيَغْتَسِلْ
অর্থ-
তোমাদের কেউ জুমু‘আর নামায আদায় করতে আসলে তার পূর্বে সে যেন গোছল করে নেয়।
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে,রাছূল বলেছেন:-
غُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ
অর্থ-
জুমু‘আর দিন গোছল করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উপর ওয়াজিব।
২..
মিছওয়াক ব্যবহার করা।
কেননা মিছওয়াক ব্যবহার করা ছুন্নাত। এর প্রমাণ হলো রাছূল বলেছেন:-
لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ
অর্থ-
আমি যদি আমার উম্মাতের জন্য কিংবা মানুষের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের সময় (বাধ্যতামূলক ভাবে) মিছওয়াক করার হুক্ম দিতাম।
৬ অপর হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
مَعَاشِرَ الْمُسْلِمِينَ, إِنَّ هَذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللَّهُ لَكُمْ عِيدًا, فَاغْتَسِلُوا, وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
অর্থ-
হে মুছলিম জনগোষ্ঠী ! এটি হলো এমন এক দিন যে দিনকে আল্লাহ তোমাদের জন্যে ‘ঈদের দিন বানিয়েছেন। অতএব তোমরা এই দিনে গোছল করো এবং অবশ্যই তোমরা মিছওয়াক করো।
৩..
আতর বা যে কোন (হালাল) সুগন্ধি ব্যবহার করা।
কেননা রাছূল বলেছেন:-
وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ –
لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ
بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى
অর্থ-
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে গোছল করে ও সাধ্যানুযায়ী পবিত্রতা হাসিল করে, আর নিজের তেল ব্যবহার করে অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (জুমু‘আর সালাতের জন্য) বের হয় এবং (অন্যদেরকে টপকে তাদেরকে কষ্ট দিয়ে নিজে সামনে যাওয়ার জন্য কিংবা আগে থেকে বসা লোকজনকে সরিয়ে মধ্যখানে নিজে বসার জন্য) দুজন লোকের মধ্যে ফাঁক করে না, তারপর তার জন্য যে পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে সেই পরিমাণ সালাত আদা করে, অতঃপর ইমাম যখন কথা বলেন (খুত্বাহ পাঠ করেন) তখন চুপ থাকে, তাহলে তার ঐ জুমু‘আ হতে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
রাছূলুল্লাহ আরো বলেছেন:-
حَقٌّ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ الْغُسْلُ وَالطِّيبُ وَالسِّوَاكُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ
অর্থ-
প্রত্যেক মুছলমানের জন্য কর্তব্য হলো জুমু‘আর দিনে গোছল করা, সুগন্ধি (যদি থাকে) ব্যবহার করা এবং মিছওয়াক করা।
৪.
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও যথাসম্ভব উত্তম কাপড় পরিধান করা।
কেননা রাছূল বলেছেন:-
عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ الْغُسْلُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَلْبَسُ مِنْ صَالِحِ ثِيَابِهِ، وَإِنْ كَانَ لَهُ طِيبٌ مَسَّ مِنْهُ
অর্থ-
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক লোকের উচিত জুমু‘আর দিনে গোছল করা, নিজের উত্তম কাপড় পরিধান করা এবং যদি তার নিকট সুগন্ধি থাকে তাহলে তা থেকে ব্যবহার করা।
৫.
মাছজিদে প্রবেশ করেই (তাহিয়্যাতুল মাছজিদ) দুই রাক‘আত নামায পড়া
যদিও ইমামের খুতবা চলাকালীন মাছজিদে প্রবেশ করা হয়।
কেননা রাছূল বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا
অর্থ-
জুমু‘আর দিনে ইমাম খুতবা দিচ্ছেন এমতাবস্থায় তোমাদের কেউ যদি মাছজিদে প্রবেশ করে, তাহলে সে যেন সংক্ষিপ্ত করে দু’রাক‘আত সালাত পড়ে নেয়।
এ সম্পর্কে জাবির ইবনু ‘আব্দিল্লাহ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:-
دَخَلَ رَجُلٌ يَوْمَ الجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَقَالَ أَصَلَّيْتَ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: قُمْ فَصَلِّ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ-
একদা জমু‘আর দিনে নাবী 1 খুত্বাহ দিচ্ছিলেন, এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি মাছজিদে প্রবেশ করলে তিনি (নাবী 1) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি নামায পড়েছ? লোকটি বলল- না। তখন রাছূল 1 তাকে বললেন:- তাহলে তুমি দু’ রাক‘আত পড়ে নাও।
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে, রাছূল বলেছেন:-
إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَقَدْ خَرَجَ الْإِمَامُ، فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ
অর্থ-
জুমু‘আর দিনে ইমাম (জুমু‘আর খুত্বাহ দানের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে যাওয়ার পরে যদি কেউ মাছজিদে আসে, তাহলে সে যেন ( প্রথমে ) দুই রাক‘আত (তাহিয়্যাতুল মাছজিদ) পড়ে নেয়।
৬.
জুমু‘আর দিনে ছূরাতুল কাহ্ফ তিলাওয়াত করা।
এর প্রমাণ হলো, আবূ ছা‘য়ীদ খুদরী 3 হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
إِنَّ مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
অর্থ-
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার জন্য নূর চমকাতে থাকবে।
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
من تحت قدمه إلى عنان السماء يضيء له يوم القيامة وغفر له ما بين –
من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة سطع له نور
الجمعتين অর্থ-
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আকাশ পর্যন্ত নূর চমকাতে থাকবে, ক্বিয়ামাতের দিন এই নূর তাকে আলো দেবে এবং পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
৭.
জুমু‘আর দিনে ছূরাতুল কাহ্ফ তিলাওয়াত করা।
এর প্রমাণ হলো, আবূ ছা‘য়ীদ খুদরী 3 হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
إِنَّ مَنْ قَرَأَ سُورَةَ الْكَهْفِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ أَضَاءَ لَهُ مِنَ النُّورِ مَا بَيْنَ الْجُمُعَتَيْنِ
অর্থ-
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার জন্য নূর চমকাতে থাকবে।
অন্য হাদীছে বর্ণিত রয়েছে, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
من تحت قدمه إلى عنان السماء يضيء له يوم القيامة وغفر له ما بين –
من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة سطع له نور
الجمعتين অর্থ-
যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে ছূরা আল কাহ্ফ তিলাওয়াত করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আকাশ পর্যন্ত নূর চমকাতে থাকবে, ক্বিয়ামাতের দিন এই নূর তাকে আলো দেবে এবং পরবর্তী জুমু‘আ পর্যন্ত তার গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
৮.
জুমু‘আর দিনে রাছূল (সঃ) এর প্রতি বেশি বেশি দুরূদ ও ছালাম পাঠ করা।
এর প্রমাণ হলো, আঊছ বিন আউছ হতে বর্ণিত, রাছূলুল্লাহ বলেছেন:-
وَفِيهِ النَّفْخَةُ، وَفِيهِ الصَّعْقَةُ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلَاةِ فِيهِ، فَإِنَّ –
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ قُبِضَ
صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ
অর্থ-
তোমাদের সর্বোত্তম দিন হলো জুমু‘আর দিন। এ দিনে আদমকে (5) সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিন তাঁর জান ক্বব্য (মৃত্যু দান) করা হয়েছে, এ দিনই শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে, এ দিনই মহাপ্রলয় সাধিত হবে।
অতএব এ দিনে (জুমু‘আর দিনে) বেশি করে আমার প্রতি সালাত (দুরূদ) পাঠ করো, কেননা তোমাদের সালাত আমার কাছে পেশ করা হয়।